ফরিদুল ইসলাম রঞ্জু, ঠাকুরগাঁও থেকে: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আক্ষেপ করে বলেন, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী আমৃত্যু কারাবাসে থাকলেন। তার রাজনৈতিক বিষয়ে কথা না বললেও তাকে নিয়ে বলার অনেক কিছুই রয়েছে। তিনি এ দেশে কোরআনের একজন বিজ্ঞ পন্ডিত ছিলেন। তিনি যে আমৃত্যু কারাবাস করলেন, তার সে বিচার আন্তর্জাতিক মানদন্ডে হয়নি, এবং এ বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। আজ বুধবার (১৬ আগস্ট) সকালে নিজ নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা রুহুল আমিন মিলনায়তনে জেলা বিএনপি আয়োজিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তির জন্য দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর হত্যা বিষয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে শহীদ জিয়া নয় বরং আওয়ামী লীগ এর নেতারাই হত্যা করেছিলেন। বেঈমানি আপনাদের দলের রক্তেই রয়েছে। আপনারা আর আপনাদের দল দেশের জন্যে কি ভালো করবেন। দেশের মানুষ আজ তা উপলব্ধি করছে।
মির্জা আলমগীর বলেন, দেশে আজ সরকারী চাকরীর জন্য কেউ আবেদন করলে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। সরকারী চাকরী করতে তাদের ডিএনএ টেস্ট করা হয় যে সে প্রার্থী আওয়ামীলীগ করে না বিএনপি। এও দেখা হয় সে প্রার্থীর পরিবারের লোকেরা কে কি দল করে। সরকারী চাকরী করতে হলে আজ প্রথম শর্তই হচ্ছে আওয়ামীলীগ করতে হবে। তা না হলে কোন চাকরি হবেনা।
বরেন্দ্র নিয়ে তিনি বলেন, আমরা এদেশের উত্তরের মানুষদের কথা মাথায় রেখে বরেন্দ্র প্রকল্প চালু করেছিলাম। উত্তরের জেলা গুলিতে বড় কোন নদী না থাকায় চাষবাসে সেচ সমস্যা দূরীকরণের জন্য এ বরেন্দ্র প্রকল্পের জন্ম। আমরা এটাকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় রেখেছিলাম। অথচ এরশাদ সরকার এটাকে গ্রামীণ ব্যাংক এর নিকট দিয়ে দেয়। পরবর্তীতে আমরা আবারো ক্ষমতায় এসে এটাকে পুনরুদ্ধার করি। এ প্রকল্পে উত্তরের জেলাগুলির কৃষকরা সঠিক সময়ে চাষে সেচ পেয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। অথচ আবারো এ প্রকল্পের আজ কি অবস্থা।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সময়ে বিদ্যুৎ এর দাম ছিল প্রায় ৩ টাকা এখন ৭ টাকা, চালের দাম ছিল ১২ বা ১৪ টাকা এখন প্রায় ৭০ টাকা। এমনিভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যেভাবে সরকার বাড়াচ্ছে তাতে জনগণ আজ চিন্তিত। আজকে ডাক্তার আছে চিকিৎসার ব্যবস্থা নাই, এম্বুলেন্স আছে তেল নাই, ছাত্র-ছাত্রী আছে কিন্তু সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থা নাই। সরকার প্রতিটি খাতে লুটপাট করে খাচ্ছে। উন্নয়নের নামে তারা চুরি করছে।
নির্বাচনে জয়লাভ নিশ্চিত করতে ডিসি-এসপিদের রদবদল নিয়ে তিনি বলেন, এগুলিও এ সরকারের নীল নকশার অংশ। তারা কাকে কোথায় বসিয়ে নির্বাচন করলে ভালো হবে সে দিকটা সাজিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন। তবে আমরা হুশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই যে, এক তরফার নির্বাচন আর ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেয়া হবেনা। তাতে আপনারা যতই নিজেদের নানা ছকে সাজিয়ে তুলেন না কেন।
আমাদের সাহস নিয়ে দাঁড়াতে হবে বলে তিনি বলেন, বসে থাকার মতো চুপ করে থাকার মতো আর সময় নাই। রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে, সবকিছু দিয়ে এই ভোট চোর সরকারকে নামাতে হবে। তা না হলে দেশ রসাতলে যেতে আর বেশি দেরি লাগবেনা। জনগণ যাকে চায় তাকে রাষ্ট্রীয় কাজে থাকার সুযোগ দেওয়া হোক।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর করিম, আল মামুন আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: পয়গাম আলী, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবু হোসেন তুহিনসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।